দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার কিংবা মাদার তেরেসার গল্প কারো অজানা নয়। তেমনি অজানা নয় গণতন্ত্রের জন্য অবিরাম সংগ্রামী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কথাও। শসস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানের দৃশ্য থেকে দৃশ্যপট পুরোটায় আলো ছড়িয়ে দিলেন তিনি। এক মুহূর্তে যেন সবকিছু মিলিয়ে গেল তাঁর আলোর কাছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন!’ সূরা: আলে-ইমরান, ২৬। এ সত্য অম্লান, অবধারিত।
ওরা ভেবেছিলো বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশেষ করে দেবে, ওরা ভেবেছিল কালের অতলে হারিয়ে যাবে দেশনেত্রী। কিন্তু ওরা জানতো না, প্রতিটি অবমাননা একদিন ফুল হয়ে শোভা পাবে। মানুষের মনে তাঁর নাম সযত্নে লেখা আছে, মানুষের অধিকার আদায়ে তাঁর পুরোটা জীবন উৎসর্গ করা। তাঁকে কি আর এত সহজে ভোলা যায়? তিনি জায়গা করে নিয়েছেন আমাদের বুক পকেটে, মন পকেটে। দেশের গণতান্ত্রিক সকল সংগ্রামের সাথে অবিচ্ছেদ্য এক নাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
তাঁর ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা উড়ে আসা কোনো উপাধি নয়। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই তাকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা দেয় কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি সংগঠন। এর আগে ২০১১ সালের ২৪ মে নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সিনেট কর্তৃক কোনো বিদেশিকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে জিয়া পরিবারের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তেমনি জড়িত বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভাত ও ভোটের অধিকারের সাথে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। রাজপথ থেকে সংসদ, সেখান থেকে বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী রূপে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মাঝে দ্বিতীয় মহিলা সরকারপ্রধান। এই যে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে জায়গা করে নেওয়া, এই সংগ্রামটা একান্তই তাঁর নিজের। এই জায়গাটা তিনি অর্জন করে নিয়েছেন। মানুষের জন্য লড়াই করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য রাজপথে নেমেছেন, স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছেন, তারপর বাংলাদেশের মানুষের ভোটের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছেন রাষ্ট্র পরিচালনার মহান দায়িত্বে।
বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক অমর প্রতীক, প্রজ্ঞা ও সংগ্রামের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ১৯৮৩ সালে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত সাত দলীয় ঐক্যজোট ছিল সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের সূচনা। এই আন্দোলনে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে গণতন্ত্রের পতাকা তুলে ধরেন, যেখানে আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি জনগণের মনে আশার সঞ্চার করেন। তাঁর প্রজ্ঞা ও নেতৃত্বে এই আন্দোলন ১৯৯০ সালে এরশাদের পতন এবং গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করে।
দীর্ঘ আট বছরের ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম ও নেতৃত্বগুণের কারণে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেন। একসঙ্গে পাঁচটি আসনে জয়লাভ করা তাঁর জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে আসা এই মহীয়সী নারী শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি এক শক্তি, যিনি মানুষের হৃদয়ে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বের আদর্শ দেশপ্রেম ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণের এক চিরন্তন আলেখ্য।
বেগম খালেদা জিয়া বারবার বন্দি হয়ে, নির্যাতিত হয়েও মাথা নত করেননি; বরং প্রতিটি বাধা তাঁর অদম্য সাহসকে আরও দৃঢ় করেছে। ১৯৮২ সাল থেকে রাজনীতিতে তাঁর যাত্রা শুরু হলেও, এরশাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে একাধিকবার কারাবরণ তাঁর অঙ্গীকারের দৃঢ়তাকে স্পষ্ট করে। এরপর ২০০৭ সালে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ বন্দি করা হয় তাঁকে। দীর্ঘ এক বছর কারাগারে থাকার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ মেলেনি। অথচ, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বারবার তাঁকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু প্রতিটি প্রতিকূলতা তিনি সহ্য করেছেন লৌহমানবীর মতো, গণতন্ত্রের শিকড়কে আরও গভীর করে তুলতে।
২০১৮ সালের জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তাঁকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দি করা হয়। হাসিনা সরকারের ফ্যাসিস্ট মনোভাব ও আজ্ঞাবহ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে নিপীড়িত করা হলেও তিনি এক মুহূর্তের জন্যও দুর্বল হননি। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হলেও, গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে তিনি অবিচল থেকেছেন। বেগম খালেদা জিয়া একজন সংগ্রামী নারী, যিনি দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাঁর লড়াই শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি ছিল ন্যায় ও সত্যের পথে একটি জাতির স্বাধীনতার দাবির প্রতিফলন।
বহুবার তাঁকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য বহু প্রলোভন দেখানো হয়েছে। ১/১১ এর সময় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা অবৈধ সরকারের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিতে রাজি হলেও নিজের জায়গা থেকে এক বিন্দুও সরে দাঁড়াননি তিনি। তাঁকে এবং তাঁর নাড়িকাটা ধন অন্তরের স্পন্দন দুই সন্তানকে অকথ্য নির্যাতন করা হলেও গণতন্ত্রের জন্য তাঁর অবিরাম সংগ্রাম থেকে বিন্দুমাত্র সরাতে পারেনি কেউ। গণতন্ত্রের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বহুবার। বালির ট্রাকে আটকে গেছে গণতন্ত্র, নিজ বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, নিজ স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবুও ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা আর অকুতোভয় পথচলা থেকে একটুও সরে আসেননি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন পুরো দেশের আলো যেন নিজের করে নিয়েছেন। হঠাৎ করেই দারুণ আলোচনায় তিনি। অথচ, তাঁর জীবনের কোনোদিন তিনি নিজেকে নিয়ে ভাবেননি, ভেবেছেন মানুষের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে মানুষের মৌলিক চাহিদা সকল কিছু নিয়েই ভেবেছেন। নিজে আলোচনায় না থাকতে চাইলেও আলোচনা যেন তাঁকে নিজের করে নিতে চায়। এই দেশের মানুষের জন্য তাঁকে আলোচনায় রাখা উচিত। বাসা, কারাগার আর হাসপাতাল এই তিনটা জায়গার মধ্যে আটকে যায় তাঁর জীবন। তবুও বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি, হননি সামান্যটুকু রাগান্বিত। কথা বলার সুযোগ পেয়েও করেননি বিন্দুমাত্র বিষোদগার। ৭ আগস্টের মহাসমাবেশে সম্মান জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন, লড়াই করেছেন তাদেরকে। নিজের নামের সাথে যে আপসহীন শব্দটা যোগ হয়েছে তাও তাঁর অসীম প্রজ্ঞা এবং সাহসিকতার প্রতিচ্ছবিই যেন! পরিবর্তিত এই বাংলাদেশে চাইলেই অনেক কথা বলতে পারতেন। অথচ, আমাদের সবাক পৃথিবী থেকে অবাক বিস্ময়ে তিনি বললেন, কারো ক্ষমা চাই না, আইনীভাবে মামলা লড়তে চাই।
এই যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কিংবা তরুণ উপদেষ্টারা দেশনেত্রীর সামনে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন, এটা যেন পুরো দেশের প্রতিচ্ছবি। তাঁরাও জানেন তাঁরা কার সামনে দাঁড়িয়েছেন। জীবনভর মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন, সেই সংগ্রামী নেত্রীর সামনে গিয়ে হৃদয়ের গভীর থেকে সম্মান আসবে তা কোনো রূপকথার গল্প নয়, এটা বাস্তবের চেয়েও কঠিন বাস্তব। তাই তো তাঁরা আবেগ প্রকাশ করেছেন নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও দেশনেত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। সম্মান শব্দটা যেন সমানুপাতিক হারেই বাড়তে থাকে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা যেভাবে অপদস্ত করেছেন ড. ইউনূসকে ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রবল সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ফ্যাসিস্ট হাসিনার মুখের অশ্রাব্য ভাষার কষাঘাত ঠিকরে পড়ত এই দুইজন মানুষের উপরেই। অথচ, আজ এই দুইজন মানুষ কতটা সম্মানিত!
দীর্ঘ এক যুগ পরে সেনানিবাসে দেশনেত্রী, ছয় বছর পরে সম্মুখে, আজ দেশের পুরোটা আকাশ জুড়ে জ্যোৎস্নার চাঁদ, সেই চাঁদের আলোর রঙিন আভায় ভেসে গেছে দেশের প্রতিটি মানুষ, সবাই যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন, বুক ফেটে বের হয়ে গেছে কষ্টগুলো, পালিয়ে গেছে পিছনের দিনের ফেলে আসা আর্তনাদ, মুখ ফুটে সবাই যেন আজ বলতে পারছে, ‘যাক, প্রিয় দেশনেত্রীকে তো সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারলাম!’
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি
‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন
বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী
আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
সিলেট সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
২ মার্চকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানালেন মঈন খান
সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে যা বললেন বদিউল আলম
সিংগাইরে সাংবাদিক মামুনের বাবার ইন্তেকাল
বিরামপুরে ধান-ক্ষেত থেকে হাত বাধা আদিবাসী দিনমজুর মহিলার লাশ উদ্ধার!
আওয়ামী সরকার শুধু ফ্যাসিস্ট নয় তাদের আরেকটা নাম দিয়েছি স্যাডিস্ট : অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা
লাল পাহাড়ের দেশকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অরুণ চক্রবর্তী
বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান
আগামী রোববার-সোমবারও বন্ধ থাকবে ঢাকা সিটি কলেজ
অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাব ইউক্রেনে: পুতিন
নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান
‘ফিফা ছিল খুবই দুর্বল, আমিই একে বিশাল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছি’
ফ্যাসিস্ট হাসিনা কাউকে রেহাই দেয়নি, জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়ে গেছেন: রিজভী
স্বৈরাচার সরকারের দোষররা এখনো মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে: রফিকুল ইসলাম খান
জমিয়ত সভাপতি রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক